কার জন্য কেমন ইন্টারনেট প্যাকেজ?

কিছুদিন আগে পর্যন্ত হয়তো ইন্টারনেট ব্যবহার অনেকটা শখের বিষয় ছিল। কিন্তু এখন দৈনন্দিন কাজের সঙ্গে বিভিন্নভাবে যুক্ত হয়ে আছে ইন্টারনেট। পারস্পরিক যোগাযোগ, তথ্য সংগ্রহ ও তথ্য আদান-প্রদান, ব্যবসার কাজ পরিচালনাসহ আরও বহু কাজে ইন্টারনেট ব্যবহার হচ্ছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশের মোট ব্যবহারকারীর মধ্যে একটি বড় অংশ মুঠোফোন থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যম যেমন আলাদা হতে পারে একইভাবে সবার ব্যবহার ও প্রয়োজন এক রকম নয়। প্রয়োজন ও কাজের ধরন অনুযায়ী ইন্টারনেট সংযোগ বেছে নিলে খরচটাও নিয়ন্ত্রণের মধ্য রাখা সম্ভব হয়।


থ্রিজি ইন্টারনেট
দেশের সবগুলো মুঠোফোন সংযোগদাতাই উচ্চগতির থ্রিজি ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে থাকে। তবে সব সংযোগদাতা যে দেশব্যাপী এই সেবা দিতে পারছে এমন নয়। তাই ইন্টারনেট প্যাকেজ কেনার আগে আপনি নির্দিষ্ট ‘কভারেজ’ এলাকার মধ্যে আছেন কি না, সেটি দেখে নেওয়া উচিত। ইন্টারনেট প্যাকেজগুলো বেশ কয়েকভাবে ভাগ করে তৈির করা হয়েছে। এগুলো মূলত ব্যবহারের ধরনের ওপর নির্ভর করে সাজানো হয়। প্যাকেজগুলোকে সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। একটি হলো সাধারণ ইন্টারনেট প্যাকেজ—যা নির্দিষ্ট কয়েক দিন বা কয়েক ঘণ্টার জন্য নির্ধারণ করে দেওয়া থাকে। আর ওই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট পরিমাণ ডেটা ব্যবহার করা যাবে। সংযোগদাতা ভেদে এই সময় ও ডেটার পরিমাণ কিছুটা আলাদা হয়ে থাকে। আবার কিছু সংযোগদাতা অফপিক সময়ে (সাধারণত কম ব্যবহার হয় যে সময়ে) বা গভীর রাতে ব্যবহারের জন্য অন্য সময়ের থেকে কিছুটা কম মূল্যের প্যাকেজ নির্বাচনের সুযোগ রেখেছে।
মুঠোফোন সংযোগদাতাদের সোশ্যাল প্যাকগুলো তাদের জন্য, যারা ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ, ভাইবারের মতো কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটের বাইরে আর কিছুই করে না। বিশাল এই ইন্টারনেটের দুনিয়ায় যাদের ব্যবহার এই তিন-চারটি ওয়েবসাইটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ তাদের কথা ভেবেই এই প্যাকেজগুলো তৈরি করেছে। এই প্যাকেজ সক্রিয় থাকার পরে ওই তিন-চারটি ওয়েবসাইট-সেবার বাইরে কোনো ওয়েবসাইট দেখতে চাইলে আলাদা করে অন্য কোনো প্যাকেজও সক্রিয় রাখতে হতে পারে। সাধারণ ডেটা ভলিউম প্যাকেজ থেকে এই ধরনের সোশ্যাল প্যাকগুলোর মূল্য তুলনামূলক কম।

 

এই দুই ধরনের প্যাকেজের পাশাপাশি ‘স্মার্ট প্যাকেজ’ নামের কিছু সংযোগও আছে। থ্রিজির মাধ্যমে ভিডিও কল করা, এমএমএস ব্যবহার ইত্যাদির সময় ও সংখ্যার মাধ্যমে এই প্যাকেজগুলোর মূল্য নির্ধারণ হয়ে থাকে।

তারহীন ওয়াইম্যাক্স

উচ্চগতির তারহীন ইন্টারনেটের একটি জনপ্রিয় প্রযুক্তি হলো ওয়াইম্যাক্স। দেশে মোট দুটি অনুমোদিত ওয়াইম্যাক্স সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। থ্রিজি প্যাকেজগুলোর চেয়ে কম দামে এই সংযোগ পাওয়া যায়। প্রিপেইড এবং পোস্টপেইড ধরনের কিছু প্যাকেজ রয়েছে, যেখানে ইন্টারনেটের গতি ও ডেটা ভলিউমের মাধ্যমে মূল্য নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। তবে সব প্যাকেজের ন্যূনতম ব্রডব্যান্ড হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।

ওয়াইম্যাক্স ইন্টারনেট ব্যবহার করার জন্য আলাদাভাবে মডেম ব্যবহার করতে হয়। তবে ওয়াইম্যাক্স মডেমের সঙ্গে রাউটার যুক্ত করে একাধিক ব্যবহারকারী ইন্টারনেট সংযোগটি ব্যবহার করতে পারেন একই সময়ে। আবার কিছু কিছু মডেমের সঙ্গে রাউটার যুক্ত করাই থাকে। তবে একটি বিষয় জেনে রাখতে হবে যে মুঠোফোন থেকে সরাসরি ওয়াইম্যাক্স ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায় না। ঢাকার বাইরে এই ধরনের ইন্টারনেট সংযোগ কয়েকটি শহরে রয়েছে।

ব্রডব্যান্ড

ব্রডব্যান্ড বলতে সাধারণত তারের মাধ্যমে সংযুক্ত উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যবস্থাকে বোঝানো হয়। দেশের প্রায় সব জেলা, উপজেলায় ব্রডব্যান্ড সংযোগ নেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এই ধরনের প্যাকেজগুলোর মূল্য নির্ধারণ করা হয়ে থাকে ইন্টারনেটের গতির ওপর এবং ডেটা ভলিউম উন্মুক্ত থাকে। তবে উচ্চগতির প্যাকেজগুলোতে কখনো কখনো সর্বোচ্চ ডেটা ভলিউম ব্যবহারের পরিমাণ নির্ধারণ করে দেওয়া থাকে। একটি মাত্র তারের মাধ্যমে ব্যবহারকারীকে সংযোগ দেওয়া হলেও রাউটার যুক্ত করে একই সঙ্গে অনেক ব্যবহারকারী একটি সংযোগ ব্যবহার করতে পারবেন।

বিটিসিএল এডিএসএল

বাংলাদেশ টেলিকম কোম্পানি লিমিটেড—বিটিসিএলের টেলিফোন সংযোগ-লাইনের ওপর ভিত্তি করেও একটি ইন্টারনেট ব্যবস্থা রয়েছে। উচ্চগতির এই নির্ভরযোগ্য সংযোগটি বেশ কয়েকটি প্যাকেজে ভাগ করা হয়েছে।

বাসা বা অফিসে ব্যবহার করার জন্য তারহীন ওয়াইম্যাক্স বা সাধারণ ব্রডব্যান্ড সংযোগ ব্যবহার করা যেতে পারে। মূল সংযোগের সঙ্গে রাউটার যুক্ত করে একাধিক ব্যবহারকারী ইন্টারনেট ব্যবহার করতে এবং সহজে নিজেদের মধ্যে ফাইল আদান-প্রদান করতে পারবেন। তবে সম্ভাব্য ব্যবহারকারীর সংখ্যার ওপর নির্ভর করে ইন্টারনেটের গতি নির্বাচন করা উচিত। মুঠোফোন অপারেটর, ওয়াইম্যাক্স ইন্টারনেট, বিটিসিএল এডিএসএলের ওয়েবসাইটে নির্দিষ্ট প্যাকেজের মূল্য ও সেবার পরিধি বিস্তারিত উল্লেখ করা আছে। আর ব্রডব্যান্ড সংযোগগুলো সাধারণত এলাকা বা অঞ্চলভিত্তিক হয়ে থাকে। তাই নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করে ইন্টারনেট সংযোগগুলো কেনা যাবে।

ইন্টারনেট একটি বিশাল জগৎ, পৃথিবীর যে প্রান্তেই অবস্থান করা হোক না কেন ইন্টারনেটে যুক্ত থাকতে পারস্পরিক দূরত্বটি আর বুঝতে পারা যায় না। সামাজিক যোগাযোগের জন্য ফেসবুক বা অন্যান্য বেশ কিছু সেবা রয়েছে। তবে ইন্টারনেটের ব্যাপ্তি এবং ব্যবহার কেবল এই তিন-চারটি ওয়েবসাইটই নয়। ইন্টারনেটে নানা কাজের বহু ওয়েবসাইট ও সেবা ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। সঠিক ব্যবহার সাফল্য লাভের একটি মাধ্যম হতে পারে।

Published on Prothom Alo, on July 18, 2016 http://www.prothom-alo.com/technology/article/917281

internet package options bangladesh

Related Articles